সাধারনত আমরা দেখে থাকি যে, আমাদের চারিপাশে অনেক সাধু ও বৈষ্ণবরা চন্দন ও তিলক পরে থাকেন। এবং আমরা মনে করি যে হয়ত চন্দন ও তিলক শুধু তাদেরই পরা উচিৎ। এইযে ধারনা, সেটি কতটা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত?
আসুন জেনে নেই শাস্ত্রের আলোকে।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বয়ং বলেছেন-
তিলক না থাকে যদি বিপ্রের কপালে।
সে কপাল শ্মশান সদৃশ বেদে বলে।।
প্রভু বলে, কেনে ভাই, কপালে তোমার।
তিলক না দেখি কেনে , কি যুক্তি ইহার?
পদ্মপুরাণে শ্রীভগবানের উক্তি ব্রহ্মার প্রতি -
“মৎ প্রিয়ার্থ শুভার্থম্বা রক্ষার্থে চতুরানন ।
মদ্ভক্তো ধারয়েন্নিত্যমূর্ধ্বপুন্ড্রং ভয়াপহম ।।”
-হে ব্রহ্মা, আমার ভক্ত আমার প্রীতির জন্য কিংবা তার নিজের মঙ্গলের জন্য এবং নিজের রক্ষার নিমিত্তে ভয় নাশকারী উর্ধ্বপুন্ড্রং তিলক প্রতিদিন ধারন করবে ।
শ্রীনারদ মুনির উক্তি এই যে-
“যজ্ঞো দানং তপো হোমঃ স্বাধ্যায়ঃ পিতৃর্পণম্ ।
ব্যর্থং ভবতি তৎসর্ব মূর্ধ্ব পুন্ড্রং বিনা কৃতম্ ।।
-উর্ধ্বংপুন্ড্রং তিলক ধারন করে না,তার যজ্ঞ দান,তপস্যা,হোম,বেদ অধ্যয়ন,পিতৃ তর্পণ প্রভৃতি যেকোনও অনুষ্ঠিত কর্ম বিফল হয়।
আরও বলেছেন-
“যচ্ছরীরং মনুষ্যানামূর্ধ্বপুন্ড্রং বিনা কৃতম্ ।
দ্রষ্টব্যং নৈব তত্তাবৎ শ্মশানসদৃশং ভবেৎ ।।”
-উর্ধ্বপুন্ড্র তিলকহীন মানুষের দেহ শ্মশান সদৃশ । সেই ব্যক্তি দর্শনের যোগ্য নয় (পদ্মপুরান)
কাশীখন্ডে শ্রীযমরাজের উক্তি তাঁর দূতদের প্রতি-
“দূতা শৃনুতঃ যদভালং গোপীচন্দলাঞ্ছিতম্ ।
জ্বালদিবন্ধনবৎ সোহপি ত্যজ্যো দূরে প্রযত্নতঃ ।।”
- হে দূতগণ ! যাঁর ললাটে গোপীচন্দন পুন্ড্র তিলক দেখবে,জলন্ত অঙ্গার সদৃশ তাঁকে অতি যত্নে দূর থেকে পরিত্যাগ করবে । কারণ সেরকম ব্যক্তি নারকীয় যাতনা লাভের অনুপযুক্ত ।
অনেকে সন্ধ্যাবন্দনাদি করেন কিন্তু তিলক করেন না,এরকম এক ব্যক্তিকে দেখে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছিলেন, তোমার সন্ধ্যা আজি বন্ধ্য অর্থাৎ বিফল ।
শ্রীচৈতন্যমঙ্গল রচয়িতা শ্রীলোচন দাস ঠাকুর গেয়েছেন-
“তিলক ধারন না করে যে জন,
বৃথা জনম তার ।।”
বিষ্ঞু পুরাণ বলচেন বিষ্ঞু দেব নারদ কে?
নারদ আমার প্রিয় ভক্ত সেই হয় যে আমার গুণ কীর্তন সর্বদা করে কপালে চন্দন পরিদান করে, যে ভক্তের কপালে চন্দন পরিদান করেনা সে ভক্তের কপাল শশানে পরিণিত হয়!! পবিত্র চন্দন শরীরে লেপন করলে পাপ ও অশুভ শক্তি বিনষ্ট হয়!!