ইলেকট্রনিক প্রকৌশলে মাইক্রোকন্ট্রোলারের পদযাত্রা খুব বেশী দিনের পুরাতন নয়। মাত্র কয়েক দশক পূর্বে এর চর্চা শুরু হয়েছে। পুরাতন দিনে প্রকৌশলের অধিকাংশ প্রসেস ও প্রসেস কন্ট্রোল সিস্টেম ছিল যান্ত্রিক (Mechanical) এবং যা ছিল ব্যয়বহুল এবং কম সূক্ষতর। এই অসুবিধা দূরীকরনে অপেক্ষাকৃত অধিক সূক্ষ ও সস্তা কন্ট্রোলিং পদ্ধতি যুগের চাহিদা হয়ে দাঁড়ায়। এ চাহিদা মোকাবেলায় গবেষকগণ কন্ট্রোলিং পদ্ধতিতে যান্ত্রিক পদ্ধতির পরিবর্তে বৈদ্যূতিক পদ্ধতির অবতারণা করেন। প্রাথমিক সময়ে বৈদ্যূতিক কন্ট্রোল সিস্টেমসমূহ ডিজাইনও খুব বেশী সুবিধাজনক ছিল না। কারন প্রতিটি আলাদা প্রসেসের জন্য আলাদা বৈদ্যূতিক সার্কিট ডিজাইন করতে হতো এবং এগুলি ছিল বৃহৎ ও অত্যন্ত জটিল। তাই যুগের চাহিদানূযায়ী ধীরে ধীরে মাইক্রোকন্ট্রোলার কন্ট্রোল সিস্টেম উন্নত হয়। মাইক্রোকন্ট্রোলার কন্ট্রোল সিস্টেমের বড় সুবিধা হলো সার্কিট ডিজাইন সরল এবং একই মাইক্রোকন্ট্রোলার চীপে ভিন্ন ভিন্ন প্রোগ্রাম করে বিভিন্ন সার্কিট ডিজাইন করা যায় ফলে সিস্টেম ডিজাইনের ব্যয় কমে আসে। আজকের দিনে মাইক্রোকন্ট্রোলার বিষয়টি ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে গন্য তাই ইলেকট্রনিক্সের শিক্ষার্থীদের নিকট বিষয়টি খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ।
মাইক্রোকন্ট্রোলার কি?
মাইক্রোকন্ট্রোলার হলো বিশেষ ধরনের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট যা একক চীপ কম্পিউটার হিসাবে কাজ করে। আধুনিক ভিএলএসআই প্রযুক্তিতে মাইক্রোকন্ট্রোলার হলো একক চীপের অভ্যন্তরে জটিল লজিক সার্কিটসমূহের সমন্বয়ে গঠিত একটি ক্ষুদ্র প্রোগ্রামযোগ্য কম্পিউটার। একটি মাইক্রোকন্ট্রোলার চীপের অভ্যন্তরে পূর্ণাংগ কম্পিউটার সংগঠনের প্রায় সকল অংশই বিদ্যমান থাকে যেমনঃ Processor, RAM, ROM, I/O Port, ADC, Timer ইত্যাদি, ফলে ডিভাইসটি একটি কম্পিউটারের বিকল্প হিসাবে কাজ করতে পারে। এখানে Micro শব্দটির অর্থ ক্ষুদ্র অর্থাত মাইক্রোকন্ট্রোলার চীপের অভ্যন্তরে যে কম্পিউটারটি গঠিত হয়েছে তা আকৃতিতে ক্ষুদ্র এবং Controller শব্দটির অর্থ নিয়ন্ত্রনকারী অর্থাত ডিভাইসটি কোন বৈদ্যূতিক অবজেক্ট, প্রসেস বা ইভেন্টকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। অনেক সময় মাইক্রোকন্ট্রোলারকে Embedded Controller বলা হয় কারণ এটি যে সাপোর্ট সার্কিটসমূহকে নিয়ন্ত্রন করে তা তার সাথেই Embedded বা সংযুক্ত করা থাকে। Intel 8051, ATmega8, PIC 16F8 কয়েকটি জনপ্রিয় মাইক্রোকন্ট্রোলারের উদাহরণ।
মাইক্রোপ্রসেসরর কি?
মাইক্রোপ্রসসর একটি ডিজিটাল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট যা ইনপুট বাসের মাধ্যমে ডাটা ও নির্দেশ গ্রহন করে নির্দেশ অনুযায়ী ডাটা প্রকৃয়া করে ফলাফল তৈরী করে, উক্ত ফলাফল আউটপুট বাসের মাধ্যমে আউটপুট ডিভাইসে প্রেরণ করে এবং ইনপুট আউটপুট ডিভাইসসমূহকে নিয়ন্ত্রনের জন্য বিভিন্ন কন্ট্রোল সিগনাল তৈরী করে। একটি কম্পিউটার ব্যবস্থার যাবতীয় গাণিতিক ও যৌক্তিক কার্যাবলী মাইক্রোপ্রসেসরে সংঘটিত হয়। মাইক্রোপ্রসসর একটি কম্পিউটার ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট CPU হিসাবে কাজ করে। Intel 8085, MC68000, Z80 কয়েকটি জনপ্রিয় মাইক্রোপ্রসসরের উদাহরণ।
মাইক্রোকন্ট্রোলার উন্নয়নের ইতিহাস ও বিবর্তনঃ
১৯৭১ সালে Intel Corporation সর্বপ্রথম 4-bit মাইক্রোপ্রসেসর চীপ Intel 4004 তৈরী করে। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে Intel 8008 এবং অন্যান্য কার্যোপযোগী মাইক্রোপ্রসেসরসমূহ তৈরী হয়। এই সকল নব্য সৃষ্ট মাইক্রোপ্রসেসরসমূহ দ্বারা কর্যোপযোগী ইলেকট্রনিক সিস্টেম ডিজাইন করতে আরো কিছু অতিরিক্ত চীপ যেমনঃ RAM, ROM ইত্যাদি প্রয়োজন হতো, মাইক্রোপ্রসেসর চীপ এবং এই সকল RAM, ROM এর মধ্যে ডাটা আদান প্রদানের ক্ষেত্রে আরো কিছু ইন্টারফেসিং চীপও প্রয়োজন হতো যা ইলেকট্রনিক সিস্টেম ডিজাইনের ব্যয় বৃদ্ধি করতো। ফলে তৎকালীন গবেষকগণ এমন একটি ডিভাইস উদ্ভাবনের কথা ভাবছিলেন যাতে একটি চীপের মধ্যেই ROM, RAM, Microprocessor, Clock এই সবগুলি ব্যবস্থা সমন্বিত থাকে। এর ফলে সিস্টেমে ব্যবহৃত চীপের সংখ্যা কমে আসবে ও ডিজাইন ব্যয় কম হবে।