গরিলা, ওরাং উটান, বনবো, এবং শিম্পাঞ্জীর সাথে মানুষের মিল খুঁজে পেতে জীববিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের সাথে মানুষের অস্বাভাবিক মিলগুলি একটি বাচ্চার দৃষ্টিতেও ধরা পরে। গ্রেট এপসরা আমাদের মত দক্ষতার সাথে হাতের ব্যবহার করতে পারে যা অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। সবচাইতে লক্ষণীয় ব্যাপার হল তাদের মুখে বিভিন্ন রকমের আবেগের যে ছাপ পড়ে তা আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। শুধুমাত্র বাহ্যিক সাদৃশ্যই নয় তাদের মধ্যেও সামাজিক ক্রমাধিকারতন্ত্র আছে এবং আমরা যাকে সংস্কৃতি বলি সেসবের কিছু আভাসও তাদের মাঝে দেখা যায়। এতসব মিল থাকা সত্ত্বেও আমাদের জিনোমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পার্থক্যই তৈরি করেছে আমাদের যত বৈসাদৃশ্যগুলো। কৃষিকাজ, ভাষা, শিল্পকলা, সঙ্গীত, প্রযুক্তি, দর্শন — এই সব সাফল্য যা আমাদের শিম্পাঞ্জীদের থেকে খুব পরিষ্কার ভাবেই আলাদা করেছে – সেগুলো আমাদের বংশানুগতি সংকেতের মধ্যে কোন এক ভাবে আবদ্ধ হয়ে গেছে। খুব সাম্প্রতিক অতীতেও আমাদের পক্ষে এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য গুলির কারণ নির্ণয় করা সম্ভব ছিল না। ঠিক কি কারণে আমরা সোজা হয়ে হাটতে পারি বা আমাদের জটিল মস্তিষ্কের পেছনের কারণই বা কী? এর সাথে সাথে সাথে আমদের বেশ কিছু রোগ যেমন নির্দিষ্ট ধরণের ম্যালেরিয়া, আলঝেইমার, যেগুলো শিম্পাঞ্জীদের আক্রান্ত করে না — এগুলো আমাদের কাছে রহস্য। কিন্তু খুব দ্রুতই সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। ডারউইনের সময়েরও বহু আগে থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ফসিল সংগ্রহ করে প্রাণীদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যের এক বিশাল তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তুলতে সমর্থ হন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দুপায়ে হাঁটা, মস্তিষ্কের আকার, করোটির আকৃতি, মুখমণ্ডল, পেষণ দাঁত, এবং অপোজিবল বৃদ্ধাঙ্গুলি ইত্যাদি। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক গবেষণা এবং বিভিন্ন প্রকার বয়স নির্ধারণী পদ্ধতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই বৈশিষ্ট্যগুলির উদ্ভবের এবং বিলুপ্ত হওয়ার সময়কাল বের করতে সমর্থ হয়েছেন এবং তৈরি করেছেন একটি বিস্তারিত জীবন বৃক্ষ যা কিনা বন মানুষ, মানুষের পূর্ব পুরুষ, এবং মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।