১৯৯৬ সালের দিকে একদিন ইন্টেলের এক প্রকৌশলী জিম কারদাক ও এরিকসনের এক প্রকৌশলী সেভেন ম্যাটিসন একটি প্রতিযোগিতায় হেরে যাবার পর, একসাথে একটি বারে মদ পান করতে যান। মদ পান করার ফাঁকে ফাঁকে তাদের মধ্যে ইতিহাস নিয়ে গল্প হতে থাকে। ম্যাটিসন কয়েকদিন আগেই দি লংশিপ নামে একটি বই পড়েছিলেন। সেই বইয়ে রাজা হারাল্ড ব্লুটুথের একটি কাহিনী উল্লেখ ছিল। ম্যাটিসন সেটি জিমকে গল্পের ফাঁকে বলেন। পরে ইতিহাস প্রেমী জিম বাসায় ফিরে দি ভাইকিংস নামে একটি বই পড়েন। সেখানে তিনি রাজা ব্লুটুথের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। যা পরবর্তীতে তারবিহীন এই প্রযুক্তির নামকরণের সময় তার মাথায় আসে।
এক লেখায় জিম বলেন, হারাল্ড ডেনমার্কের বিভিন্ন গোত্রকে একত্রিত করেছিল ও তাদের মধ্যে খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার করেছিল। আমার মনে হয়েছিল এ কারণেই, নতুন এই তারবিহীন প্রযুক্তিটির নাম ব্লুটুথ রাখা যেতে পারে। কারণ এ প্রযুক্তি অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ডিভাইসকে একত্রিত করবে। নামকরণের পাশাপাশি ব্লুটুথ টেকনোলোজির লোগোটিরও কিন্তু রয়েছে একটি বিশেষত্ব।
জিম পরবর্তীতে তার নামকরণটি সবার কাছে উপস্থাপনের জন্য পাওয়ার পয়েন্টে একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করেন। এ সময় তিনি হারাল্ড ব্লুটুথের এক হাতে একটি মোবাইল ফোন ও অন্য হাতে একটি ল্যাপটপ যুক্ত একটি নকল শিলা চিত্রও তৈরি করেন। কিন্তু এর পরও আইবিএমের প্রস্তাবিত নাম PAN (Personal Area Networking) কে নির্বাচিত করা হয়। তবে পরে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (SEO) সময় কিছু সমস্যার কারণে এটি বাতিল করা হয়। ফলে শেষমেশ এই প্রযুক্তির নাম অফিসিয়ালভাবেই ব্লুটুথ রাখা হয়, যা পরবর্তীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।নামকরণের পাশাপাশি ব্লুটুথ টেকনোলোজির লোগোটিরও কিন্তু রয়েছে একটি বিশেষত্ব। এতদিন ধরে হয়তো ব্লুটুথ লোগোটি দেখে আপনি মনে করেছিলেন, এমনি কয়েকটি সরলরেখাকে বিশেষভাবে সাজিয়ে এখানে একটি B তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি তা নয়, উপরের ছবিতে খেয়াল করে দেখুন লোগোর এই B টি আসলে নর্ডিক ভাষার H ও B এর মিলনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, যা আসলে Harald Bluetooth এর নামের আদ্যক্ষর। এই দুটি অক্ষরকে একত্র করার ফলে তা একটি B অক্ষরের রূপ নিয়েছে এবং পরিণত হয়েছে আমাদের বর্তমানের বহুল প্রচলিত ব্লুটুথের লোগোতে। হাজার বছর আগে মৃত্যু হলেও এখনও সবার পকেটে পকেটে সেই ভাইকিং রাজা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এই বিষয়বস্তু সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে আপনারা উইকিপিডিয়ার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সেখানে রাজা ‘হারাল্ড ব্লুটুথ’ সম্পর্কেও অনেক কিছু জানা যাবে।