ধর্ম কোনো পণ্য নয়, ধর্মীয় কাজ কোনো পেশা নয়। ধর্মীয় কাজ মানুষ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য, এর বিনিময়ও গ্রহণ করবে আল্লাহর কাছ থেকে। আল্লাহর সকল নবী-রসুল, অবতার, মহামানবগণও এই কথা ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই না, আমার বিনিময় আল্লাহর কাছে। সুতরাং তাঁদের উম্মতের জন্যও একই বিধান। কিন্তু তা না করে প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বড় জনগোষ্ঠী কিছু ধর্মীয় জ্ঞান আয়ত্ব করে সেটাকে পুঁজি করে অর্থ উপার্জন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পার্থিব স্বার্থ হাসিল করে থাকে। এই পার্থিব স্বার্থের মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতাও আসে, মিলাদ পড়িয়ে, নামাজ পড়িয়ে টাকা নেওয়াও আসে, ভক্ত মুরিদকে আল্লাহর সান্নিধ্য এনে দেওয়ার নাম করে উপঢৌকন নেওয়াও আসে। যখনই এসব পার্থিব স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসাবে ধর্মকে ব্যবহার করা হয় তখনই ধর্মে প্রবেশ করে বিকৃতি। অনেক কিছুই তারা বাণিজ্যিক স্বার্থে অতিরঞ্জন করেন, নিজেদের স্বার্থ বিরোধী যা কিছু থাকে তা গোপন করেন। যেহেতু তাদের ধর্মীয় কিছু জ্ঞান থাকে তারা যা বলেন মানুষ সেটাকে আল্লাহ-রসুলের কথা বলে গ্রহণ করে নেয়। তারা যখন কাউকে কাফের ফতোয়া দেয়, মানুষ ঐ ব্যক্তিকে (যাকে কাফের বলা হলো) ঘৃণা করে। এই ধর্মব্যবসায়ীরা আল্লাহর শত্র“, কারণ এরা আল্লাহর প্রেরিত সত্যকে বিকৃত করে, পার্থিব স্বার্থে ব্যবহার করে। পবিত্র কোর’আনে এবং হাদিসে ধর্মব্যবসার সবগুলি ধরন সম্পর্কেই নিষেধাজ্ঞা ঘোষিত হয়েছে, ধর্মকে বিক্রি করে পার্থিব সুযোগ সুবিধা, সম্পদ হাসিলের কোনো সুযোগ আল্লাহ রাখেন নি। তিনি একে কেবল হারামই করেন নি, তিনি বলেছেন, তারা পথভ্রষ্ট, তারা আগুন ছাড়া কিছুই খায় না। তিনি আখেরাতে তাদেরকে পবিত্র করবেন না, তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। যাদের গন্তব্য জাহান্নাম, তাদের অনুসারীরাও জাহান্নামেই যাবে এটাই স্বাভাবিক। তবুও আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, তোমরা তাদের অনুসরণ করো যারা বিনিময় গ্রহণ করে না এবং সঠিক পথে আছে (সুরা ইয়াসীন ২১)। এই যে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি, তারা কিন্তু এই সত্য বিষয়গুলি কখনো মানুষের সামনে প্রকাশ করে না। তারা সুদ, ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করেন কিন্তু ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে নিশ্চুপ। এ প্রসঙ্গটি তারা গোপন রাখতে চান। তাদের একটি শ্রেণি নিজেদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতে মানুষের ধর্মীয় চেতনাকে কাজে লাগায়। তারা নিজেদেরকে ইসলামের ধারক হিসাবে প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধপক্ষকে ইসলামবিদ্বেষী হিসাবে ফতোয়া দেন। জনগণও তাদের কথায় প্রভাবিত হয়। কিন্তু এই শ্রেণিটি যে স্বার্থের হাতিয়ার হিসাবে ধর্মকে ব্যবহার করছে এবং তারা নিজেরাই যে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধ সেটা যখন প্রকাশ করে দেওয়া হবে তখন জনগণ তাদেরকে ধিক্কার দেবে। জনগণ যখন বুঝতে পারবে আল্লাহ তাদেরকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন এবং তাদেরকে অনুসরণ করলে জাহান্নামে যেতে হবে তখন জনগণও আর তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। এভাবেই আমাদের দেশ থেকে, পৃথিবী থেকে ধর্মের নামে দাঙ্গা, ধর্মের নামে অপরাজনীতি, প্রতিহিংসা, সহিংসতা, ক্ষমতার জন্য, ব্যক্তিগত দলীয় স্বার্থে ধর্মের অপব্যবহার বন্ধ হবে। মানুষের জীবন যেমন নিরাপদ হবে তেমনি তারা সুপথও পাবে। ইসলামে ধর্মব্যবসায়ীদের কোনো স্থান নেই, যে সমাজে তাদেরকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় সেই সমাজেও তারা অশান্তি বিস্তার করে।