menu search
brightness_auto
আমাদের সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ | প্রশ্ন এবং উত্তর প্রদান করে আমাদের সাইট থেকে আয় করতে পারবেন | তাই দেরি না করে এখনই একাউন্ট করেন |
more_vert
thumb_up_off_alt 1 like thumb_down_off_alt 0 dislike

1 Answer

more_vert
 
verified
Best answer
প্রতি বছর গজ, ঘোটক, নৌকা, দোলা এইসব যানবাহন করে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আসা ও যাওয়ার সময় শুভ, অশুভ, ক্ষয়ক্ষতি ও নানাভাবে মানুষের মৃত্যুসংবাদও শোনা যায়। পুরাকালের মুনি, ঋষি ও পণ্ডিতেরাও একসময় ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছিলেন, মায়ের আগমন ও গমন এবং পুজোর সময়ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মৃত্যু, ধ্বংস-এই সমস্ত অশুভ ঘটনার কারণ কী? তাঁরা আরও ভেবেছিলেন যে, শুভ ঘটনার চেয়ে অশুভ ঘটনার প্রাধান্যই বা কেন থাকে, তাছাড়াও দেব-দেবীরা এই ব্যাপারে নিরব কেন? ভাবনা চিন্তার পর তাঁরা ঠিক করলেন, পুজোর আগে, পুজোর সময় ও দুর্গার গমনের সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। যথাসময়ে তাঁদের দিব্যদৃষ্টিতে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে সবকিছু। ঘটনার গতি-প্রকৃতির অর্থাৎ দেবীর আগমন, গমন ও পুজোর সময় যে সব ঘটনা ঘটছে তা উপলব্ধি করে পারস্পরিক আলোচনায় দিন, তিথি ও নক্ষত্রের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলে তাদের দোষী সাব্যস্ত করলেন। কিন্তু তাঁদের একথাও মনে হলো যে, এই তিথি, নক্ষত্র ও দিন এত শক্তি কোথা থেকে পেলো। আবার চলল অনুসন্ধান। এবার তাঁরা জানতে পারলেন যে, দেব-দেবীরাই নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্যেই এই সব তিথি-নক্ষত্রকে বিশেষভাবে শক্তিশালী করে তাঁদের পাহারাদারে নিযুক্ত করেছিলেন।

দেব-দেবীর দাপট বা শক্তি যতই থাকুক না কেন, দিন, তিথি ও নক্ষত্রের কর্তৃত্বকে এঁরা কেউই অস্বীকার করতে পারেননি কারণ এই তিন শক্তিকে তো দেবতারাই সৃষ্টি করেছেন।

আসলে শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থার মতো দেব-দেবীরাও হিসেবের খাতায় সমতা রাখার জন্যে সৃষ্টি ও লয় এই দুটো অঙ্ককে মাথায় রেখেছিলেন। তাঁরা বুঝেছিলেন, সৃষ্টিপ্রাপ্তদের সংখ্যাকে ক্রমশই বাড়তে দিলে, মহাপ্রলয়ের সূচনা হবে, তাই ধ্বংসের প্রয়োজন আছে। লয়কে সৃষ্টি করার জন্যে বন্যা, ভূমিকম্প, মহামারি ইত্যাদির দ্বারা তাকে শক্তিশালীও করা হয়েছিল। অবশ্য দেবর্ষি নারদের কাছ থেকে এই সংবাদ পেয়ে, মুনি-ঋষি ও পণ্ডিতেরা বুঝেছিলেন দুর্গতিনাশিনী দেবী প্রয়োজনবোধে কেন ধ্বংসকারিণী রূপে আবির্ভূতা হন। এই সমস্ত প্রকৃত তথ্য উন্মোচন হবার পর, মুনি-ঋষি ও পণ্ডিতেরা বিষয়টাকে বিধিবাক্য ও শাস্ত্রমতে চিহ্নিত করেছিলেন। অর্থাৎ দুর্গার আগমন ও গমনে যে বিপর্যয় ঘটে, সেই নিয়ে তাঁদের মনে আর সংশয় রইল না বলে আদি অনন্তকাল ধরে সেই নিয়মই চলে আসছে। জ্যেতিষীরা এই ব্যাপারটিকে ‘সিম্বলিক, বা প্রতীকি রূপে ব্যাখ্যা করেছেন। ভাগ্যগণনার সময় মানুষের ভাগ্যচক্রে তিথি, নক্ষত্র, দিন ও জন্মসময় ইত্যাদির বিষয়ে লক্ষ্য রেখে তাঁরা মানুষের জীবনে শুভ, অশুভ, শোক, দুঃখ ও আনন্দের ব্যাপারটাকে মেনে নিয়েছেন। তাই জন্মসময়, দিন ও গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধির ওপর তাকিয়েই জ্যোতিষীরা কোষ্ঠী বিচার ও হাতে প্রতীকি ও অন্যান্য চিহ্ন দেখেই সার্বিক ভাগ্যচক্রের উত্থান, পতন, আয়ু, স্বাস্থ্য ইত্যাদির কথা বিচার করে থাকেন।

পৌরাণিক যুগে গজ, ঘোটক, নৌকো এবং দোলার ব্যবহার আমরা জেনেছি এবং পুরাকালেও মানুষ এই যানবাহনই প্রয়োজনবোধে কাজে লাগাতেন। এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, চার যানবাহনের মধ্যে গজকেই বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়ে শুভ যাত্রার প্রতীক বলে চিহ্নিত করা হলো কেন।

আসলে পৌরাণিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত দেখা গেছে যে, গজ গোড়া থেকেই বিশেষ সম্মানীয় জায়গায় নিজের স্থান করে নিয়েছে। দেব-দেবী ছাড়াও রাজা, মহারাজা, জমিদারদের কাছেও “গজ” রাজকীয় মর্যাদা পেয়েছে। হয়তো তাই দেবী দুর্গার গজে আগমন ও গমনকে কেন্দ্র করে বলা হয়েছে-“গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।” অর্থাৎ এই আগমন ও গমনে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণ হয়ে মানুষকে সুখ, স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে তুলবে। অন্যদিকে ঘোটক দেব-দেবী ও মানুষের কাজে ব্যবহৃত হলেও গজের মতো মর্যাদা না দিয়ে ঘোটকে মায়ের আগমন ও গমন নিয়ে বলা হয়েছে-“ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে”। অর্থাৎ ঘোটকে আগমন ও গমনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রেও অস্থিরতা প্রকাশ পাবে। যেমন, রাজনৈতিক উত্থান, পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যু ইত্যাদির প্রভাব বাড়বে। আবার নৌকায় আগমন ও গমনে বলা হয়েছে শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম। এ ক্ষেত্রে প্রবল বন্যা, ঝড়, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির জন্যে একদিকে প্লাবন ও ক্ষয়ক্ষতি এবং অন্যদিকে দ্বিগুণ শস্যবৃদ্ধি। এর মধ্যে ‘দোলায়’ আগমন ও গমন সবচেয়ে অশুভ। তাই দোলা সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, দোলায়াং মরকং ভবেৎ। মহামারি, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরা ইত্যাদির প্রভাবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু তো ঘটাবেই, আবার সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতিও হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, একমাত্র গজ ছাড়া দেবী দুর্গার অন্য তিন যানবাহনের মাধ্যমে ধ্বংস বা লয়কে ব্যবহার করা হয়েছে। শুধুমাত্র গজই প্রয়োজনমতো বৃষ্টিধারায় বসুন্ধরাকে ধন-ধান্যে সমৃদ্ধ করে তুলবে।

এই প্রসঙ্গে কোন দিনে আগমন ও গমনে কি যানবাবন ব্যবহার করা হবে সেই ব্যাপারে বলা হয়েছে-“রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ, গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।” সপ্তমীর দিনে যদি রবিবার এবং সোমবার হয়, তাহলে দুর্গার আগমন ও গমন হবে গজে। ফল-“গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা”। ঠিক এই রকমই শনিবার ও মঙ্গলবারে দুর্গার আগমন ও গমন হলে, ঘোটকের প্রভাব থাকবে। অর্থাৎ ফল-“ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে”। যদি বুধবারে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন হয়, তাহলে তিনি আসবেন এবং যাবেন নৌকায়। ফল-“শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম”। আবার দুর্গার আগমন ও গমন যদি বৃহস্পতি ও শুক্রবারে হয় তাহলে তিনি দোলায় আসবেন এবং যাবেন। ফল-“দোলায়াং মরকং ভবেৎ”।
thumb_up_off_alt 0 like thumb_down_off_alt 0 dislike

392,484 questions

384,178 answers

136 comments

1,259 users

266 অ্যাক্টিভ ইউজার
0 সদস্য 266 অতিথি
আজ ভিজিট : 111584
গতকাল ভিজিট : 163230
সর্বমোট ভিজিট : 63534807
এখানে প্রকাশিত প্রশ্ন ও উত্তরের দায়ভার কেবল সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকর্তা ও উত্তর দানকারীর৷ কোনপ্রকার আইনি সমস্যা সবজানো.কম বহন করবে না৷
...