কোনও মাসে পিরিয়ড না-হলে তাঁকে প্রেগনেন্সির লক্ষণ মনে করে থাকেন অধিকাংশ বিবাহিত মহিলাই। কিন্তু পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভধারণের একমাত্র লক্ষণ নয়। দেখা গিয়েছে, পিরিয়ড মিস না-হওয়া সত্ত্বেও গর্ভধারণ করেছেন অনেক মহিলা। পিরিয়ড ছাড়াও নানান শারীরবৃত্তিয় ঘটনা রয়েছে যা গর্ভধারণের দিকে ইশারা করে। তবে সচেতনতার অভাবে অধিকাংশ মহিলাই এ বিষয় ওয়াকিবহাল নন। পিরিয়ড ছাড়া শরীরে কোন কোন পরিবর্তন দেখে গর্ভধারণের বিষয় নিশ্চিত হতে পারেন জেনে নিন।
মর্নিং সিকনেসঃ মর্নিং সিকনেসকে প্রেগনেন্সির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ মনে করা হয়। দিনে বা রাতে- যে কোনও সময় এমন হতে পারে। সাধারণত গর্ভধারণের এক মাস পর থেকে এই সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে মহিলারা অস্বস্তি অনুভব করেন। ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর বমি শুরু হয়। এ সময় অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনোর স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সকালে উঠে গা গোলায় বা বমি হয়ে থাকে। তবে শুধুই যে সকালে বমি হবে, তার কোনও মানে নেই। দিনের যে কোনও সময় একাধিক বার বমি হতে পারে। পিরিয়ড মিস করার আগে থেকেই প্রথম সপ্তাহে ৮০ শতাংশ মহিলা বমির সমস্যায় ভুগে থাকেন। আবার ৫০ শতাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার ৬ সপ্তাহ বা তার আগে থেকে বমি অনুভূত হতে থাকে।
স্তনযুগলে পরিবর্তনঃ স্তনে ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা ভারী হওয়া গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে। কোনও কোনও মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের পরই স্তনে ব্যথা হয় বা ভারী হয়ে যায়। আপনার সঙ্গেও এমন কিছু হলে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করিয়ে দেখে নেবেন।
ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ
কোনও সংক্রমণের কারণে এমন হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদেরও এই ডিসচার্জ হয়। কিছু কিছু মহিলার প্রেগনেন্সির প্রথম তিনমাসে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হয়ে থাকে। হরমোনে পরিবর্তনের ফলে এই ডিসচার্জ হয়।
শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিঃ নানান কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। সংক্রমণ বা সর্দি তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তবে অনেক সময় গর্ভধারণের কারণেও শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। গর্ভধারণ কালে প্রোজেস্টেরোনের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন হতে পারে। ২০ দিন পর শরীরের তাপমাত্রা ওভুলেশানের কারণে বৃদ্ধি পেলে, এটি জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনার দিকে ইঙ্গিত দেয়।
ক্লান্তিঃ গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে পিরিয়ডস বন্ধ না-হলেও ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হলে প্রেগনেন্সি টেস্ট করিয়ে দেখে নেবেন। এই ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনেক সময় গর্ভধারণের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
ভ্যাজাইনাল ব্লিডিংঃ পিরিয়ডসের তারিখ ছাড়াও যদি মাঝে মধ্যে ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং প্রত্যক্ষ করে থাকেন, তা হলেও প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করিয়ে নিন। ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং, স্পটিং ও ক্র্যাম্পস প্রেগনেন্সির দিকে ইশারা করে থাকে।
মুড সুইং ও মাথা ঘোরাঃ গর্ভধারণের সময় হরমোনে নানান পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তন মুড সুইঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আকস্মিক কান্না, আবার হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, আনন্দিত হয়ে পড়া আবার কখনও এক্সাইটেড হয়ে পড়া এ সময় সাধারণ ঘটনা। আপনার সঙ্গেও এমন কিছু হয়ে থাকলে, উপেক্ষা করবেন না। প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করিয়ে দেখে দিন। পাশাপাশি প্রায়ই মাথা ঘোরা ও গা গোলানোও গর্ভধারণের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।
মাথা ব্যথা ও মাথা ভারী হওয়াঃ প্রেগনেন্সির শুরুর দিনে মাথা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায় রক্ত সঞ্চালন এবং হরমোনের স্তর বৃদ্ধির কারণে এমন হয়। এ সময় তীব্র মাথা ব্যথার পাশাপাশি ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন।
বার বার শৌচালয় যাওয়াঃ বার বার টয়লেট যাওয়াও গর্ভধারণের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। ওভ্যুলেশান প্রক্রিয়ার পর গর্ভধারণ সম্পন্ন হলে, দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার প্রস্রাব করতে পারেন। গর্ভাবস্থার সময় শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় কিডনি অধিক পরিমাণে তরল নিঃসৃত করতে শুরু করে, যা প্রস্বাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে।
খাওয়া-দাওয়ার ইচ্ছায় পরিবর্তনঃ গর্ভধারণের পর অধিকাংশ মহিলার স্বাদ পাল্টে যায়। অনেকে এমন কিছু শাক-সবজি বা খাবার খেতে শুরু করে দেন, যা তাঁরা খেতে পছন্দ করেন না। আবার পছন্দের খাবারও অনেক গর্ভবতী মহিলার মুখে রোচে না। এখানেই শেষ নয়, গর্ভধারণকালে, দিন বা রাতের যে কোনও সময়, যে কোনও খাদ্য বস্তু খাবার ইচ্ছা জাগতে পারে।